বর্তমানে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা একটি কমন সমস্যা। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর
উপায় সম্পর্কে জানা থাকলে ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারে। তাই আমাদের সকলের
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন। আজকে আমরা হাঁটুর
জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় সম্পর্কে জানব।
হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক
মানুষ এবং যাদের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি দেখা দেয়। অথবা
অন্যান্য বয়সের মানুষের আঘাত জনিত কারণে কিংবা হাড় ক্ষয়ের কারণেও হাঁটুর
জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।
সুচিপত্রঃ- হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায়
ভুমিকাঃ
বর্তমানে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ এর ফলে বিভিন্ন রকমের কাজ করা বিভিন্ন রকম যন্ত্র
আবিষ্কৃত হয়েছে। এ সকল যন্ত্র আবিষ্কার হওয়ার ফলে মানুষ দিন দিন অলস হয়ে
পড়ছে। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম না করার ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখে
ভুগছে। যেমন- হাঁটুর ব্যথা, বাতের ব্যথা, স্থুলতা সহ নানা রকম জটিল সমস্যা
সৃষ্টি হচ্ছে। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় গুলো জানা থাকলে এই ধরনের
জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকা যায়। সে ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট
নিয়ম ফলো করে ব্যায়াম করা যেতে পারে। চলুন আমরা জেনে নেই হাঁটুর জয়েন্টে
ব্যথা কমানোর উপায় গুলো কি কি।
হাঁটুর ব্যথা কেন হয়ঃ
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা সাধারণত দুইটি প্রধান কারণে হয়ে থাকে। একটি হল বয়স্ক
মানুষদের ক্ষেত্রে হার ক্ষয়ে যাওয়ার কারণে ব্যথা হয়। এবং অপরটি হল দুর্ঘটনা
বা এক্সিডেন্ট এর কারণে লিগামেন্ট ছিড়ে কিংবা হাঁটুর জয়েন্টে আঘাত পাওয়ার
ফলে ব্যথা হতে পারে।
বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে এ সকল মানুষদের হাড়
ক্ষয়ের পরিমাণ বেশি এবং তারাই হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথায় বেশি বুঝে থাকেন। তবে
পুরুষদের তুলনায় নারীরা হাঁটুর জয়েন্ট এর ব্যথায় বেশি ভোগেন। সাধারণত ৪০ বা
৪৫ বছর পর মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন সমস্যা
দেখা দিতে পারে। যেমন-
(১) অস্টিও আথ্রাইটিস বা বাতের সমস্যা।
(২) অস্টিও পেরেসিস বা হাড়ের ক্ষয় সমস্যা।
(৩) জয়েন্ট ইনফেকশন বা হাড়ের জোড়ায় ক্ষয়।
উপরে উল্লেখিত তিনটি কারণগুলো মূলত বয়সের জন্য হয়ে থাকে। এছাড়াও আরো
অন্যান্য কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। পরিমাণ মতো শরীর চর্চা
না করলে কিংবা অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলেও হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। যে সকল
মানুষের ওজন অতিরিক্ত তাদের মূলত হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয়ে থাকে। এরকম
ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসার পরিবর্তে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায়ঃ
সাধারণ হাটুর জয়েন্ট এ ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম,
সাধারণ কিছু চিকিৎসা কিংবা ঘরোয়া চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। হাঁটু জয়েন্টে
ব্যথা কমানোর উপায় গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
সাঁতার কাটাঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি
সাঁতার কাটতে পারেন। সাঁতার কাটলে যে আপনার হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমবে শুধু
তাই নয় আপনি শারীরিকভাবেও ফিট থাকতে পারবেন। সাঁতার কাটা এক ধরনের ব্যায়াম।
সাঁতার কাটার ফলে আপনার শরীরের সমস্ত মাংসপেশীগুলো সংকোচন এবং প্রসারন ঘটে।
ব্যায়ম করাঃ হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি
নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমানোর
নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রয়েছে। প্রথমে হাঁটু সোজা করে পা টানটান রেখে দশ
সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এরপর পা দুটো আবারো স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসুন।
এভাবে আট থেকে দশবার এই ব্যায়ামটি নিয়মিত করুন। এই ব্যায়ামটি যেকোনো সময়
করতে পারেন।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর বিশেষ কিছু ব্যায়াম যা নির্দিষ্ট সময় এবং
নির্দিষ্ট নিয়মে করতে হয়। সে ব্যায়াম গুলি প্রতিদিন অন্তত তিন থেকে চার বার
করতে হয়। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এবং
ডাক্তারের শেখানো ব্যায়ামগুলো নিয়ম অনুযায়ী করতে হবে।
হাঁটুর ব্যথার চিকিৎসাঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর চিকিৎসার
জন্য আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যাথার চিকিৎসা
আপনার ব্যাথার ধরণের ওপর নির্ভর করে। স্বাভাবিকভাবে হাটু ফুলে গেলে আপনি
হাঁটুতে গরম কাপড়ের স্যাক দিতে পারেন। অথবা ক্যালসিয়ামের ঘাট বিজনিত কারণে
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হলে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে পারেন। আপনার যদি ওজন
অতিরিক্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ওজন কমানোর ব্যবস্থা করুন। এক্ষেত্রে ডাক্তারের
পরামর্শ অনুযায়ী চলাফেরা করুন।
বরফঃ হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমানোর জন্য বরফ বেশ কার্যকর। আপনার
যদি আঘাত জনিত কারণে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয়ে থাকে তাহলে আপনি সেখানে বরফ
থেরাপি ব্যবহার করতে পারেন। বরফ থেরাপি নিরাপদ এবং বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে
সরাসরি বরফ আরাক প্রাপ্ত স্থানে না ঘষে সুতির কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে আঘাতপ্রাপ্ত
স্থানে আস্তে আস্তে মালিশ করুন। অথবা আইসপ্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
গরম তাপঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি গরম তাপ
দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি কাপড় গরম করেও স্যাক দিতে পারেন। অথবা হিট প্যাক
কিনে কিংবা বোতলে গরম পানি ভরে সেই হিট প্যাক এবং গরম পানির বোতল আঘাতযুক্ত বা
ব্যথাযুক্ত জায়গায় মালিশ করতে পারেন।
চেরিঃ এসপিরিন জাতীয় ওষুধ শরীরের যে কোন স্থানের ব্যাথা কমানোর
জন্য বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু একটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে
অ্যাসপিরিনের চাইতে চেরি আরো বেশি কার্যকর এবং দ্রুত কাজ করে। কিন্তু অবশ্যই
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি চেরি ব্যবহার করতে পারেন। এই
চেরি ফলে প্রচুর প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
আদাঃ আদা খাওয়া বা আদার রস পাকস্থলীর জন্য বেশ উপকারী। এছাড়াও
আদা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। হাটুর
জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি আদা বা আদার রস পান করতে পারেন। একজন
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম আদা খাওয়া উচিত।
হলুদঃ হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। হলুদ আমাদের শরীরে
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সে সাথে হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমাতেও
সাহায্য করে। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি হলুদ খেতে পারেন।
স্যামনঃ এক এক মানুষের এক এক ধরনের মাছ পছন্দ। তবে স্যামন মাছে
প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি রয়েছে যা স্বাস্থ্য এবং মস্তিষ্কের জন্য বেশ
উপকারী। এছাড়াও এই মাসে বিদ্যমান ওমেগা থ্রি শরীরের ব্যথা এবং জয়েন্টের ব্যথা
বা ফলা কমাতে সাহায্য করে। ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি স্যামন মাছ খেতে
পারেন।
সেলারিঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি সেলারি
শাক খেতে পারেন। সুন্দর গন্ধ বিশিষ্ট এক প্রকারের শাক হলো সেলারি। শরীরকে সুস্থ
রাখার জন্য সেলারি শাক বেশ উপকারী। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা কিংবা হাঁটুর
জয়েন্টে ব্যথা কমাতে সেলারি শাক ভালো ভূমিকা পালন করে।
অলিভ অয়েলঃ অলিভ অয়েল এমন একটি জিনিস যা রান্না করে খাওয়ার
পাশাপাশি শরীরেও মাখা যায়। এবং এই অলিভ অয়েল এর মাধ্যমে শরীরের ব্যথা কমানো
সম্ভব। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি অলিভ অয়েল ব্যথাযুক্ত
স্থানে মালিশ করতে পারেন।
গোলমরিচঃ ঝাল মসলার মধ্যে গোলমরিচ অন্যতম। অন্যান্য মরিচের তুলনায়
গোলমরিচ একটু বেশি ঝাল। গোল মরিচে সাধারণত অতিমাত্রায় ক্যাপ্সাসিন থাকে। অনেক
সময় এই গোলমরিচকে পেন কিলার বা ব্যাথা নাশক হিসেবে তৈরিকৃত ওষুধে ব্যবহার করা
হয়।
আরো পড়ুনঃ গরমে ঘামাচি থেকে মুক্তির সহজ উপায়
হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি যে কোন ক্রিমের সঙ্গে গোলমরিচের
গুড়া মিশিয়ে ব্যথাযুক্ত স্থানে মালিশ করতে পারেন।
ওয়ালনাটঃ ওয়ালমেট বাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক গুণ রয়েছে। এই
বাদামেও ওমেগা থ্রি রয়েছে যা শরীরে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। হাঁটুর জয়েন্টে
ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি বাদাম খেতে পারেন।
রসুনঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি রসুন খেতে
পারেন। রসুন যে শুধু হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথায় কমায় তা নয় মানুষের হার্টকে
ভালো রাখতে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে রসুনের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
এছাড়াও মানুষের শরীরে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের র্যাশ দূর করতে রসুন ভালো কাজ
করে।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমাতে পুষ্টিকর খাবারঃ
পুষ্টিগুণের অভাবেও অনেক সময় যেকোনো বয়সের মানুষের হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে
পারে। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা
হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনি
পুষ্টিকর খাবার খাবেন। দুধ হল পুষ্টির গুদামঘর। দুধে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম রয়েছে। এক কাপ দুধে প্রায় ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। দুধ
ছাড়াও আপনি ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করতে সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস খেতে
পারেন। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে
ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে।
উপসংহারঃ
সুপ্রিয় পাঠক আজকে আমরা হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে যে উপায়
গুলো প্রয়োগ করলেন ব্যথা কমবে সেগুলো জানলাম। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হলে
উঠাবসা এবং চলাফেরা করতে অনেক প্রবলেম হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই হাঁটুর
জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায় গুলো জেনে রাখা উচিত। আজকে আমরা সেই উপায়গুলো
জানলাম। আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনারা উপকার পেলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া এবং
বন্ধু-বান্ধবের কাছে শেয়ার করতে পারেন। 25790
Comments
Post a Comment